
মত প্রকাশে সহায়তা ও সহযোগিতার সংযোগ
নানা পরিমাপ বলছে বিরুদ্ধ মতের প্রশ্নে মানুষ ক্রমেই অসহিষ্ণু আচরণ করছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক বিষয়, জাতিগত বিরোধ ও বিশ্বাসের সঙ্গে সংঘাতের ক্ষেত্রে। এর ফলে নানা বিরোধ ও বিপর্যয় রোধে, যেমন : হুজুগ, প্রপাগান্ডা, হেট স্পিচ বা এগুলোর ফলে আক্রমণাত্মক হয়ে নাজুক জনগোষ্ঠীর জীবনহানি বা সম্পদের ক্ষতির মতো ঘটনা ঘটছে। অনলাইন যোগাযোগ ও সামাজিক মাধ্যমের যে ইকো চেম্বার ইফেক্ট, এগুলো এই সব নেতিবাচক বিষয়ে আবেগগত গুণিতক হিসেবে কাজ করছে। এর ফলে বিশ্বে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আজ হুমকির মুখে। এই পরিস্থিতিতে অনেক ক্ষেত্রে রাষ্ট্র অথবা তার প্রতিষ্ঠানগুলো এমন কিছু নিয়ম, নীতি, আইন প্রয়োগ ও দমনমূলক আচরণ প্রদর্শন করছে যে মানুষ ভীত হয়ে প্রাতিষ্ঠানিক সেন্সরশিপ বা স্বনিয়ন্ত্রণ আরোপ করছে। অথচ জনগণ, বিশেষ করে তরুণদের মত প্রকাশের স্বাধীনতার চর্চা তাদের শিক্ষা ও ব্যক্তি উন্নয়নের জন্য অতি প্রয়োজনীয়। সে কারণে যত বাধাই আসুক মতপ্রকাশের স্বাধীনতার চর্চা চালিয়ে যেতে হবে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার চর্চা একটি গতিশীল বিষয়। একদিকে মিডিয়া ও ইনফরমেশন লিটারেসির মাধ্যমে সঠিক তথ্য আহরণ এবং সেটা থেকে ইতিবাচক ও ডেলিবারেট চিন্তা থেকে মত প্রকাশ। এর সঙ্গে অন্যদের মতকে সাবলীলভাবে গ্রহণ। এ জন্য প্রয়োজন সহনশীলতার চর্চা, যা রাতারাতি হয় না, নিয়মিত চর্চার ফলে রপ্ত হয়। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার চর্চা শুধুই একটি প্রক্রিয়া বা পদ্ধতি নয়, এটি একটি দক্ষতা। যে দক্ষতা সংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে ক্রমেই শিক্ষিত হওয়া ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নিয়মিত চর্চার ফলে অর্জিত হতে পারে। _______________________________________________________________________________
মত প্রকাশের স্বাধীনতার দক্ষতা অর্জনের পথটি সরল নয়। এটি নিয়মিত চিন্তা, মনন, আবেগ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং সামাজিক অনুশীলনের চর্চা। এই চর্চায় কৌশলগত, তথ্যগত, মানসিক ও নিরাপত্তাজনিত বিভিন্ন সহযোগিতার প্রয়োজন হতে পারে। যেকোনো পরিস্থিতিতে এই চর্চায় বাধা আসতে পারে বিভিন্ন পক্ষ থেকে। ফলে আইনগত সহযোগিতা নেওয়ারও প্রয়োজন হতে পারে। অনেক দেশে ব্যক্তিগত বা প্রাতিষ্ঠানিক মতপ্রকাশের স্বাধীনতার চর্চায় সরাসরি সহযোগিতা করার মতো প্রতিষ্ঠান আছে। আমাদের দেশে সেই সুযোগ এখনো সীমিত। তবু কেউ যদি নির্যাতন, হেট স্পিচ, বুলি, সামাজিক ক্ষেত্রে, অনলাইনে ও সামাজিক মাধ্যমে হেনস্তা বা নির্যাতনের শিকার হয় তাহলে সহায়তা ও সহযোগিতামূলক প্রতিষ্ঠানগুলোর থেকে সহযোগিতা নিতে পারে।
অনেক সময় রাষ্ট্র বা তার কোনো প্রতিষ্ঠান মত প্রকাশের স্বাধীনতার চর্চার অন্তরায় হতে পারে। তখনো নিরাপত্তা বা আইনগত সহযোগিতার প্রয়োজন হতে পারে। দেশে কাজ করা কিছু অলাভজনক সংস্থা এ বিষয়ে সহায়তা করে থাকে। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যেতে পারে। মত প্রকাশের স্বাধীনতার চর্চা একটি আন্তর্জাতিক কৃত্য (cause)। সে কারণে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও সম্ভব হলে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। এর সঙ্গে আইনগত ও নিরাপত্তা সহযোগিতাও প্রয়োজন হতে পারে। প্রযুক্তিগত নিরাপত্তার জন্য অগ্রিম ব্যবস্থা নিতে হবে। বুলি বা দৈহিক নিরাপত্তার জন্য আইন-শৃঙ্খলা কর্তৃপক্ষ সহায়তা করতে পারে।